শনিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১১

বড়াইগ্রামে আয়শাদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে পল্লী সমাজ




22 January 2011 11.39pm
বড়াইগ্রাম নিউজ: 
আয়শা, রুনা,সুমিতা ও বেলুয়ারা ওরা সবাই নানা কারণে নিপিরিত, নির্যাতিত, ভাগ্যহত আসহায় ছিলেন একসময়। পল্লী সমাজ ওদের শিখিয়েছে আতœনির্ভরশীল হতে। তারাও সমাজের আর দশজন মানুষের মত মান-সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে সে পথ দেখিয়েছে।
 বাংলাদেশের প্রথম সারির এনজিও (ব্রাক) তাদের সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় প্রতি ব্রাঞ্চে একজন করে ব্যবস্থাপক দিয়ে পল্লী এলাকার দরিদ্র, নিপিরিত, বঞ্চিত নারীদের ক্ষমতায়ন, আতœনির্ভরশীল হবার ও নিজ অধিকার আদায়ের কৌশল অর্জনের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে তাদের নিয়ে পল্লীসমাজ (ঐক্যবদ্ধ সংগঠনের ন্যায়) গঠনের যাবতীয় ধারা শিখিয়েছেন। নিয়মিত সভা সেমিনারের মাধ্যমে উপরোক্ত বিষয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। ব্রাক তাদেরকে শুধুমাত্র কৌশল শিখিয়ে থাকে। এরপর পল্লীসমাজের (সংগঠনের) সকল সদস্য স্বাধীন ভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ যাবতীয় কাজ করে। ওখান থেকেই তারা নিজেদের অধিকার আদায় ও আতœনির্ভরশীল হবার কৌশল অর্জন করে থাকে। আর সেই পল্লী সমাজ থেকে অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যেই স্বাবলম্বি হয়েছেন অনেকেই।  তাদেরই কয়েকজন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আগ্রাণ গ্রামের আয়শা (২৫), গুরুমশৈলের রুনা (২৬), নটাবাড়ীয়ার সুমিতা (২৫) ও পারকোলের বেলুয়ারা (২৬)। ওরা সবাই নিজ নিজ পাড়ার পল্লীসমাজের সদস্য। সকলে ঐবদ্ধ হয়ে সেলাই প্রশিক্ষণ নেন। তারপর স্থানীয় মাঝগাঁও ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে চারজনের জন্য চারটি সেলাই মেশিন বরাদ্দ নেন। সেই থেকে তাদের পথ চলা শুরু।


আয়শা আক্তার ঃ দিনমজুর স্বামী সেন্টু মিয়া আর দুই বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার। স্বামীর আয়ে তাদের সংসারই ঠিকমত চলছিল না। তাই সাধ থাকলেও ছেলেকে দিতে পারতো না নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য আর পছন্দের পোশাক। সংসারে ঝগরা-ঝাটি, মারামারি নিত্যদিনের ঘটনায় পরিনত হয়। এসময় পল্লীসমাজের আহ্বান তাকে দেখালেন আলোর পথ। পল্লী সমাজ থেকে তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো। প্রশিক্ষণ শেষে মাঝগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সামাদকে ধরে নিয়ে নেন একটি সেলাই মেশিন। নিজের আর ছেলের কাজতো বাড়ীতেই করেন। সাথে পাড়া প্রতিবেশীর কাজ করে বেশ আয় হচ্ছে তার। প্রতিবেশীরাও বাড়ীর পাশে ইচ্ছামত কাজ করাতে পেরে বেশ খুশি। সংসারের নিত্য অভাব নিমিষেই দুর হয়ে যায়। ফিরে আসে সুখ আর আনন্দ।


রুনা বেগম ঃ  ফেরিওয়ালা শহিদুল বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে বিয়ে করলেও সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হতো প্রতিনিয়তই। কারণ সারাদিন ফেরি করে যা হয় আয় বলতে ওটুকুই। এরমাঝেই জন্ম নিল এক ফুটফুটে সন্তান। খুশির মাঝেও গভীর চিন্তায় পরেন শহিদুল দম্পতি। এরমাঝে পল্লীসমাজের হাতছানিতে সাড়া দেন রুনা বেগম। এরপর সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন নিয়ে নিজের কুড়ে ঘরে কাজ শুরু। স্বামী ফেরি করে যে আয় করেন তাদিয়ে সংসার চালান। ছেলের খাবার আর সঞ্চয় করেন রুনা বেগম প্রতিবেশীদের বিভিন্ন কাজ করে দিয়ে যা আয় হয় তা থেকে। একই ভাবে এখন সাবলম্বী সুমিতা ও বেলুয়ারা। তাদের সংসারেও ফিরে এসেছে সঙখ আর সচ্ছলতা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন