শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১১

নাব্যতা হারিয়ে বড়াল এখন ফসরের মাঠ


 বড়াইগ্রাম িনউজ : 
এককালের খরস্রোতা বড়াল নদী নাব্যতা হারিয়ে বর্তমানে পুরোদস্তুর ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে ধান, সরিষা ও রসুনের আবাদ করা হচ্ছে। এক সময় যে বড়ালের পানি সেচে নদীতীরবর্তী মানুষ তাদের জমিতে ফসল ফলাতো, বর্তমানে খোদ সে নদীর বুকেই অগভীর নলকুপ (শ্যালো মেশিন) বসিয়ে চলছে ধান চাষ।
রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মার শাখা হিসাবে উৎপন্ন হয়ে বড়াল নদী পুঠিয়া, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহর, ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে বাঘাবাড়ী হয়ে হুড়াসাগরের বুকে মিশে নাকালিয়ায় যমুনায় পড়েছে। লেখক প্রমথনাথ বিশী লিখেছেন, মুর্শিদাবাদ থেকে নদীপথে ঢাকায় আসার সংক্ষিপ্ত পথ হওয়ার কারণে তৎকালীন নবাব-বাদশাহরা এ পথেই যাতায়াত করতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিংসহ নদীটি রক্ষায় সরকারীভাবে কোন উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো বড়ালের উৎসমুখসহ বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও যাতায়াতের জন্য নদীর বুক চিড়ে রাস্তা নির্মাণ করে নদীরর পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রুদ্ধ করে দেয়ায় ঐতিহ্যবাহী বড়াল এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। সরকারী নজরদারি না থাকায় ভূমিদস্যুরা মাটি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে নদীর দুই পাড়। পাশাপাশি স্রোত না থাকায় নদীর বুকজুরে পলি জমে এর গভীরতা কমে গেছে। এ কারণে নদী দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে উভয় দিকেই শীর্ণ হয়ে গেছে। বর্ষায় নদীতে কিছু পানি জমলেও কার্তিক আসতে না আসতেই আবার তা শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। একসময় যোগাযোগ সুবিধার কারণেই বড়াল নদীর দুই পাড়ে বড়াইগ্রাম থানা ভবন, লক্ষীকোল বাজার, জোনাইল বাজার, চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুরের মতো বিভিন্ন হাটবাজার গড়ে উঠেছিল। জীবিকার প্রয়োজনে নদীসংলগ্ন এলাকায় অসংখ্য জেলে পল্লী গড়ে উঠেছিল। ছোট বড় নানা জাতের মাছ ছিল এ নদীতে। কিন্তু ১৯৮১-৮২ অর্থবচরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীতীরবর্তী উপজেলা গুলোকে তথাকথিত বন্যামুক্ত করার জন্য রাজশাহীর চারঘাটে বড়ালের উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে নদীতে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বস্ধ করে দেয়। পরে বড়াইগ্রাম উপজেরার ধামানিয়াপাড়া ও রয়না মোড়ে দু’টি বক্স কালভার্ট, চাটমোহরের নুননগরে স্লুইসগেট এবং একই উপজেলার নতুন বাজার, বোথর ও রামনগরে নদীর বুক চিড়ে রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মানের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল এখন শুকিয়ে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। বড়াল নদীতে পানি না থাকায় এখন নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আর এ সুযোগে শুষ্ক মৌসুমে এলাকার কৃষকরা নদীর বুকজুড়ে ধান, রসুন, শরিষাসহ নানা আবাদ করছেন। নদীতে পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা-বানিজ্যের কেন্দ্রগুলো কালক্রমে ম্রিয়মাণ হয়ে উঠছে। সেচসহ প্রাত্যাহিক প্রয়োজনে অতিরিক্ত মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। অচিরেই বড়ালসহ আশপাশের নদীগুলো পূনঃখনন বা সংস্কার না করলে ভবিষ্যতে এ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিরও অভাব দেখা দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন